জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পূর্ণাঙ্গ পাঠ

Date:

বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তার বক্তৃতার সম্পূর্ণ পাঠ নিচে দেওয়া হল:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

প্রিয় দেশবাসী,

আসসালামু আলাইকুম। ৬১ হিজরির এই পবিত্র দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জামাতা হযরত ইমাম হোসাইন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ময়দানে শাহাদাত বরণ করেন। আমি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলার মাটিতে আরেকটি কারবালার সৃষ্টি হয়। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

প্রিয় দেশবাসী,

আজ খুব ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে আমরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি।

শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা নিশ্চিত করে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে মানুষকে উন্নত জীবন প্রদানের যাত্রা শুরু করি।

আমরা অনেক সাফল্যও অর্জন করেছি। বিশ্ব মঞ্চে আমরা বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। তার পরেও আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন একটু শান্তি ও স্বস্তিতে ফিরে আসে, মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে যা খুবই বেদনাদায়ক।

২০১৮ সালে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীকালে, হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কোটা পুনর্বহালের জন্য ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে।

সরকার সার্কুলার বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করে এবং মাননীয় আদালত শুনানির জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করে। এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আবারও আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে।

তাছাড়া বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সহযোগিতা করেছে। বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাদের সুযোগ দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।

দুঃখের বিষয় যে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাদের উচ্চাভিলাষী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিতে থাকে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। যেহেতু বিষয়টি শীর্ষ আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে, আমি সবাইকে ধৈর্য ধরে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কিছু মহল তাদের অপ্রত্যাশিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ফলে এই তরুণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সব ঘটনাই ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক।

কত মূল্যবান প্রাণ অকারণে হারিয়ে গেল? আপনজন হারানোর বেদনা আমার থেকে বেশি কে জানে?

আমি যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার জন্য চিরশান্তি কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। আমি প্রতিটি হত্যার নিন্দা জানাই। যে সব ঘটনা ঘটেছে তা কখনোই প্রত্যাশিত ছিল না।

চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা একটি বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রদের নির্মমভাবে ছুঁড়ে মেরে হত্যা করে এবং অনেক শিক্ষার্থীর কন্ডু কেটে ফেলে। অনেককে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, একজন মারা গেছে এবং অনেকে তাদের জীবনের জন্য লড়াই করছে। ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বাসভবন ও ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

পথচারী ও দোকানদারদের ওপর হামলা করা হয়। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্রীদের হলগুলোতে হামলা চালানো হয় এবং তাদের লাঞ্ছিত করা হয়। আবাসিক হলের প্রভোস্টদের ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং আক্রমণ করা হয়। মরিয়া পদক্ষেপে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানো হয়।

আমি বিশ্বাস করি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে এই সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। বরং সন্ত্রাসীরা তাদের মধ্যে প্রবেশ করে সংঘাত ও নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

নিহতদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেব।

আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি যে যারা হত্যা, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে, তারা যেই হোক না কেন, সেই অনুযায়ী শাস্তি পাবে।

আমি আরও ঘোষণা করছি যে, হত্যাসহ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।

কাদের প্ররোচনায় সংঘাত ছড়িয়েছে এবং কারা কী উদ্দেশ্যে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত করা হবে।

আমি প্রতিবাদী টেন্ডার-বয়সী ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। এই সন্ত্রাসীরা যেকোনো সময় সংঘর্ষের পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই আমি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছে তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ করব। একই সঙ্গে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের শুনানির সুযোগ তৈরি করেছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।

এই আইনি প্রক্রিয়া সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, অপরাধীদের রাস্তায় নেমে সংঘর্ষের অবলম্বন করতে দেবেন না। আমি বিশেষভাবে সবাইকে সর্বোচ্চ আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করছি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে, তারা হতাশ হবে না।

ইনশাআল্লাহ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলের সহযোগিতায় আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করব।

আমি আবারও যারা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি এবং পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি।

খোদা হাফেজ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

Daily Opinion Stars
Daily Opinion Starshttps://dailyopinionstars.com
Welcome to Daily Opinion Stars, your go-to destination for insightful opinions, in-depth analysis, and thought-provoking commentary on the latest trends, news, and issues that matter. We are dedicated to delivering high-quality content that informs, inspires, and engages our diverse readership.

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

Trump Fires a Trade Shockwave: Why His Warning on Indian Rice Could Reshape Global Markets

President Trump’s new tariff warning on Indian rice imports has sparked global attention, raising questions about its economic impact on exporters, consumers, and the future of India–U.S. trade relations.

IndiGo Meltdown Shocks India: What Really Triggered the Nationwide Flight Chaos?

IndiGo’s sudden wave of nationwide flight cancellations exposed deep operational cracks, crew shortages and regulatory pressures, leaving thousands stranded and India’s aviation infrastructure under immense stress.

এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দেরি: খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা স্থগিতের বাস্তব সংকট

এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছাতে দেরির কারণে খালেদা জিয়ার লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার যাত্রা স্থগিত হয়। এই ঘটনাটি চিকিৎসা জরুরিতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকে নতুন করে সামনে এনেছে।