আবু সাঈদ হত্যা: শেখ হাসিনাকে দায়ী করে ন্যায়বিচারের প্রশ্ন তুললেন শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু

Date:

রিনা মুর্মুর বিস্ফোরক সাক্ষ্য বদলে দিল আবু সাঈদ হত্যা মামলার ধারা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার অঙ্গনে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মুর জবানবন্দি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে তিনি সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। তাঁর এই বিস্ফোরক সাক্ষ্য শুধু এই মামলার গতি পরিবর্তন করেনি, বরং পুরো জাতিকে এক কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে—রাষ্ট্র কি একজন ছাত্রনেতাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করতে পারে?

রিনা জানান, ঘটনার দিন ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন কিভাবে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও ছাত্রলীগের আক্রমণের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাঁর ভাষ্যমতে, এই হত্যার পেছনে ছিল সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ এবং উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা। এমন একটি জবানবন্দি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল, যেখানে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী সরাসরি দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেত্রীর বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ আনেন।

কোটা আন্দোলন থেকে গণবিপ্লব: আবু সাঈদের মৃত্যু কেন একটি ইতিহাস

আবু সাঈদ ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সেই মুখ, যিনি হাজারো শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিয়োগব্যবস্থার জন্য তিনি নির্ভীকভাবে লড়ছিলেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তার নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তা ‘জুলাই গণবিপ্লব’ নামে পরিচিতি পায়। এই সময় সরকার আন্দোলন দমন করতে শুরু করে কঠোর ব্যবস্থা।

আবু সাঈদের মৃত্যু শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়, এটি এক স্বাধীন কণ্ঠকে স্তব্ধ করার প্রচেষ্টা। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি আদর্শিক সংগ্রামের নিষ্ঠুর পরিণতি জাতির সামনে চলে আসে। এই মৃত্যু এখন আর শুধুমাত্র আন্দোলনকারীদের নয়—সমগ্র জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রশ্ন।

শেখ হাসিনাকে দায়ী করা: রাজনীতিতে অভূতপূর্ব এক অভিযোগ

রিনা মুর্মুর সাক্ষ্য নতুন করে রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এই সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নজিরবিহীন। এই অভিযোগ শুধু শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি নয়, বরং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে—এই বিচার কি শুধুই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, নাকি এটি একটি দীর্ঘদিন ধরে গুম-খুন-হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে ইতিহাসের প্রতিশোধ? শেখ হাসিনার মতো প্রভাবশালী নেত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া মানেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নেওয়া। রিনার এই সাহস দেশের তরুণ সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠছে।

গণআন্দোলন, মানবাধিকার এবং বিচারপ্রক্রিয়ার চূড়ান্ত লড়াই

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন শুধু হত্যার বিচার নয়—বিচার হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং রাষ্ট্রের জবাবদিহিতার। রিনা মুর্মুর প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য নতুন করে আলোচনায় এনেছে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বহীনতা এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ে পরিচালিত সহিংসতা।

এই মুহূর্তে সারা দেশ তাকিয়ে আছে—আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি হবে কিনা। এই বিচার প্রক্রিয়ার ফলাফল শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়, এটি নির্ধারণ করবে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কতটা নিরাপত্তা দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে আইনের অপব্যবহার হবে কিনা।

ইতিহাসের বিচারচক্রে দাঁড়িয়ে এক নতুন বাংলাদেশ

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি। রিনা মুর্মুর সাক্ষ্য এটিকে একটি ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড় করিয়েছে। রাজনীতি, বিচার ও জনগণের চেতনার মাঝে আজ এক নতুন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে—রাষ্ট্র কি সত্যিই জনগণের হয়ে কাজ করে, নাকি ক্ষমতাশালীদের নিরাপত্তার জন্য আইন ব্যবহৃত হয়?

এই মামলার রায় শুধু একজন নেত্রীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, বরং নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক সংস্কৃতি কেমন হবে। জনগণ এখন চায়—নিরপেক্ষ তদন্ত, স্বচ্ছ বিচার এবং যেকোনো ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ। কারণ ইতিহাস কখনও ক্ষমা করে না।

Daily Opinion Stars
Daily Opinion Starshttps://dailyopinionstars.com
Welcome to Daily Opinion Stars, your go-to destination for insightful opinions, in-depth analysis, and thought-provoking commentary on the latest trends, news, and issues that matter. We are dedicated to delivering high-quality content that informs, inspires, and engages our diverse readership.

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

Trump’s “Destroy Career” Remark on Modi Backfires as India Hits Back with Calm Precision

Donald Trump’s “destroy career” jibe at Prime Minister Narendra Modi over Russian oil imports drew a strong yet measured response from India. The episode revealed New Delhi’s diplomatic composure and underscored its commitment to energy independence and strategic autonomy.

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের দাবি: বাংলাদেশ কি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের দাবি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই মামলার প্রভাব শুধু একজন নেত্রীর ওপর নয়, দেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ভবিষ্যতের ওপরও গভীরভাবে পড়তে পারে।

চাঁদপুরের অনলাইন ইলিশ বাজারে শৃঙ্খলা: প্রতারণা রোধে প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপ

চাঁদপুরে অনলাইন ইলিশ বিক্রির জন্য জেলা প্রশাসনের নিবন্ধন উদ্যোগ প্রতারণা প্রতিরোধ, গুণমান নিশ্চিতকরণ এবং বাজারে ভোক্তার আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রবর্তিত হয়েছে।

India’s Return to Kabul: A Strategic Recalibration in Regional Diplomacy

India’s decision to upgrade its technical mission in Kabul to a full embassy marks a turning point in its diplomatic engagement with Afghanistan. The move underscores India’s strategy to balance security, economic, and humanitarian goals while maintaining a cautious yet proactive foreign policy stance.