কলকাতা আবারও প্রমাণ করল যে নগর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ যেকোনো মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে ভেঙে পড়তে পারে। গত কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে শহরজুড়ে সড়ক ও আবাসিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনা। এই ট্র্যাজেডি শুধু অবকাঠামোগত দুর্বলতাকেই সামনে আনেনি, বরং জননিরাপত্তা নিয়ে এক নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
শহরের পরিস্থিতি
অস্বাভাবিকভাবে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার একাধিক এলাকায় জল জমে গিয়েছে। রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, ফলে যানবাহন অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। স্কুল ও অফিসে ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে মর্মান্তিক দিক হলো বিদ্যুতের তার ও খোলা সংযোগে পানির সংস্পর্শে এসে একাধিক মৃত্যু ঘটেছে।
জনজীবনে প্রভাব
বৃষ্টির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। রেলস্টেশন, মেট্রো পরিষেবা ও বাস চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে। অনেক পরিবারকে নিজেদের বাড়ির মধ্যেই নিরাপত্তাহীন অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বজ্রপাত ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট আহতদের ভিড় বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
প্রশাসনিক পদক্ষেপ
প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে জল নিষ্কাশন ও উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন বিশেষ দল গঠন করে জল অপসারণ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা দিচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এ পদক্ষেপ দেরিতে নেওয়া হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও পরিষ্কার হলো যে কলকাতার ড্রেনেজ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় এখনো বড় ঘাটতি রয়েছে। অপ্রস্তুত অবকাঠামো এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন বিপদের মাত্রা বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামীতে এ ধরনের ভারী বৃষ্টিপাত আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে। তাই শহরকে প্রস্তুত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।
উপসংহার
কলকাতার সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট মৃত্যুর ঘটনা এক গভীর সতর্কবার্তা। এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফল নয়, বরং পরিকল্পনার ঘাটতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিফলন। নগর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যায়।