ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের রাজফুলবাড়িয়ায় বৃহস্পতিবার ভোরে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। তিনটি যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং দুটি বাসে আগুন ধরে যায়, যা দুর্ঘটনাটিকে আরও মর্মান্তিক করে তোলে।
ঘটনাটি ঘটে রাত ২টার দিকে, যখন একটি যাত্রীবাহী বাস অ্যাম্বুলেন্সটিকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এই ধাক্কার পরই অ্যাম্বুলেন্সটিতে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রকিবুল হাসানের মতে, আগুন দ্রুত দুর্ঘটনার কারণ হওয়া বাসে এবং অপর একটি শ্যামলী পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে ছড়িয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত ৩টা ৩০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তাদের প্রচেষ্টার ফলে বাসের অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে আরও হতাহতের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে, দুঃখজনকভাবে, অ্যাম্বুলেন্সের আরোহীরা কোনোভাবে পালাতে পারেননি এবং তারা আগুনের শিকার হন।
সাভার হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইন চার্জ (ওসি) সওগাতুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং তাদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। তিনি আরও জানান, “যানবাহনগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।”
দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে যে, সংঘর্ষের ফলেই আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে, আগুন লাগার সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত করা যায়নি, কারণ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা এলাকার মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে, রাতের নির্জনতায় হঠাৎ করেই একটি বিকট শব্দ শোনা যায় এবং পরে আগুনের কুণ্ডলী দেখা যায়। তারা আরও বলেন যে, দুর্ঘটনার পর বাসের যাত্রীরা দ্রুত বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও অ্যাম্বুলেন্সের আরোহীরা ততক্ষণে ভেতরে আটকে পড়েছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানিয়েছেন যে, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি ট্যাংকের বিস্ফোরণ একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। তারা আরও বলেন, শ্যামলী পরিবহনের বাসটি দুর্ঘটনার সময় তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রথম বাস এবং অ্যাম্বুলেন্সের অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত।
এই দুর্ঘটনা মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাসড়কে গাড়ির উচ্চগতি এবং চালকদের অসতর্কতাই এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার মূল কারণ। এছাড়া, অ্যাম্বুলেন্সে কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকাও দুর্ঘটনার পরিণতি গুরুতর করে তুলেছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসের প্রশংসা করা হলেও, দুর্ঘটনা এড়াতে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, মহাসড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যানবাহনের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এই ঘটনাটি কেবল চারটি প্রাণের অপচয় নয়; এটি একটি সতর্কবার্তা যে, মহাসড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যানবাহনের মান উন্নয়নে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি সেবাদানকারী যানবাহনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর বিষয়টিও জরুরি।