ঈদের ছুটি শুরু হলেই রাজধানী ঢাকার দৃশ্যপট বদলে যায়। ঈদুল আযহার কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। ঈদের ছুটির আগে শেষ কার্যদিবস ছিল বৃহস্পতিবার।
শুক্রবার থেকে শুরু করে প্রায় দশ লাখের বেশি মানুষ তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছেড়েছে, বদলে গেছে রাজধানীর পুরো চেহারা।
ঈদের ছুটির কারণে নগরীর প্রধান সড়ক ও গলিগুলো এখন প্রায় ফাঁকা। গণপরিবহন প্রায় নেই বললেই চলে, এবং স্বাভাবিক যানজট নেই। রাস্তায় শুধু কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন এবং রিকশা দ্বারা জনবহুল। অনেক বাসিন্দাই বাতাসে স্বস্তির অনুভূতি খুঁজে ফাঁকা শহরের চারপাশে ঘোরাঘুরি উপভোগ করছেন।
বিকেলে মতিঝিল, পল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বাংলামোটর, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর রোড, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, বিজয় সরণি, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় এ দৃশ্য ফুটে ওঠে।
ঢাকার বাসিন্দারা বলছেন, যারা নগরীতে থাকেন তাদের জন্য এই ছুটি আশীর্বাদ। কোনো যানজট, শব্দ দূষণ, হৈচৈ বা বিষাক্ত বাতাস নেই।
ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া যায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
আজমল হোসেন আগারগাঁও থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাচ্ছিলেন। বাস না পেয়ে রিকশা ধরলেন।
তিনি বলেন: “ঈদের ছুটির কারণে সড়কে কোনো বাস নেই। তাই একটু বেশি ভাড়ায় রিকশা নিচ্ছি। বেশি খরচ হলেও যানজট ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছি।”
জার্মানি থেকে ছুটি কাটাতে আসা সোহানা মিমি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে মোহাম্মদপুর থেকে মালিবাগ যান।
তিনি বলেন: “সাধারণত, মোহাম্মদপুর থেকে মালিবাগ যেতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। আজ সময় লেগেছে মাত্র ১৫ মিনিট। ফাঁকা থাকলে ঢাকাকে খুব সুন্দর দেখায়। সবসময় যদি এমন হতো, তাহলে আমি বিদেশে যেতে পারতাম না। ঢাকাতেই থাকতাম।”
কাকরাইল এলাকায় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সপরিবারে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন।
তিনি বলেন, যানজটের কারণে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে যেতে পারি না। ঈদের ছুটিতে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। তাই পরিবার নিয়ে বড় বোনের বাসায় যাচ্ছি। তবে গণপরিবহন না থাকার কারণে। আমাদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে।”
শাহবাগ মোড়ে ফাহিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা, যানজট নেই, কিন্তু গণপরিবহন নেই বললেই চলে। রিকশা আছে, কিন্তু রিকশায় করে বেশিদূর যাওয়া যায় না। তাই আমি আছি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছি।”
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাভার পরিবহনের চালক উজ্জল মিয়া। তিনি বলেন, “আজ ঢাকার সব রাস্তাই ফাঁকা। তবে যাত্রী সংখ্যা খুবই কম। তাই যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন মোড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে গাড়ি চালানোটা মজার, কিন্তু যেহেতু সেখানে। যাত্রী কম, আমরা বেশি আয় করি না।”
মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে শিকড় পরিবহনের চালক রুবেল বলেন, “অন্য দিনগুলোতে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে চার ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এই ছুটির দিনে সময় লাগে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টা। একমাত্র সমস্যা হল যাত্রীর অভাব।”
সড়কে যানবাহনের চাপ কমে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা।
সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মাহবুব আলম বলেন, ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবেই ঢাকায় মানুষের সংখ্যা কমে যায়। ফলে রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা থাকে। তবে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে নেওয়া হয়েছে।”
আসাদগেটে সার্জেন্ট রাসেল বলেন, ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমে যায়। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকে। তবে ফাঁকা ঢাকায় কেউ কেউ অতিরিক্ত গতিতে মোটরবাইক ও গাড়ি চালায়। খালি ঢাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ঝুঁকি তাই আমরা যেকোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।