বাংলাদেশে সম্প্রতি কিছু ইসলামপন্থী সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন (ISKCON) নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ—ইসকন ধর্মীয় সংগঠনের আড়ালে “হিন্দু উগ্রবাদ” ও “বিদেশি প্রভাব” বিস্তার করছে। এই দাবিকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ও আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রেক্ষাপট
ইসকন বহু বছর ধরে বাংলাদেশে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের মন্দির, দানমূলক প্রকল্প ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেশব্যাপী বিস্তৃত। তবে সাম্প্রতিক সময় ইসলামি সংগঠনগুলোর একাংশ অভিযোগ তুলেছে, ইসকনের কার্যক্রম কেবল ধর্মীয় নয়—এটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যম। এই বক্তব্যের ফলে দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্ভাব্য কারণ
ইসকন নিষিদ্ধের দাবি শুধুমাত্র ধর্মীয় আবেগের ফল নয়; এর পেছনে রাজনৈতিক ও সামাজিক হিসাবও কাজ করছে। একদিকে ধর্মীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার মনোভাব থেকে সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এই ইস্যুকে ব্যবহার করছে নিজেদের সমর্থন জোরদার করার জন্য। এছাড়া, সামাজিক বিভাজন ও ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসকনকে লক্ষ্যবস্তু করা একধরনের রাজনৈতিক প্রতীক হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রের ভূমিকা
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। যদি কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তা যাচাই হওয়া উচিত স্বচ্ছ ও আইনসঙ্গত উপায়ে। শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা সংবিধান ও মানবাধিকারের পরিপন্থী হবে। রাষ্ট্রকে অবশ্যই সহনশীলতা ও ন্যায়ের নীতিতে অটল থাকতে হবে, যাতে সমাজে পারস্পরিক আস্থা বজায় থাকে।
উপসংহার
ইসকন নিষিদ্ধের দাবি কেবল একটি সংগঠনকে ঘিরে নয়; এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় সহনশীলতা, সামাজিক ঐক্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বড় পরীক্ষা। ধর্মের নামে বিভাজন নয়—সংলাপ, ন্যায়বিচার ও সহাবস্থানের ভিত্তিতেই একটি স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে।


