২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপের একটি ঐতিহাসিক ম্যাচ হয়ে উঠল ম্যানচেস্টার সিটি বনাম আল-হিলাল লড়াই। অনেকেই ধারণা করেছিল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি সহজেই জয় তুলে নেবে, কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল তা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। এক অবিশ্বাস্য ম্যাচে সৌদি ক্লাব আল-হিলাল ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিল বর্তমান ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নদের।
ম্যাচের সারসংক্ষেপ
- তারিখ ও স্থান: ৩০ জুন ২০২৫, ক্যাম্পিং ওয়ার্ল্ড স্টেডিয়াম, অরল্যান্ডো, যুক্তরাষ্ট্র
- ফলাফল: ম্যানচেস্টার সিটি ৩ – ৪ আল-হিলাল (এক্সট্রা টাইমে)
- দর্শক সংখ্যা: প্রায় ৪২ হাজারের বেশি ফুটবলপ্রেমী এই ম্যাচে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন।
প্রথমার্ধ: সিটির নিয়ন্ত্রণ
ম্যানচেস্টার সিটি প্রথমার্ধে খেলার নিয়ন্ত্রণে ছিল। নবম মিনিটেই বার্নার্ডো সিলভা গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। পজিশন ধরে রেখে পাসিং ফুটবলে আধিপত্য বজায় রাখে পেপ গার্দিওলার দল। তবে প্রথমার্ধে আর কোনো গোল হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধ: আল-হিলালের ফিরে আসা
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই ম্যাচে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। আল-হিলালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মারকো লিওনার্দো ৪৬ মিনিটে গোল করে সমতা ফেরান। মাত্র ৬ মিনিট পরেই ম্যালকম দ্বিতীয় গোল করে আল-হিলালকে এগিয়ে দেন।
ম্যান সিটি চেষ্টা করে ফিরে আসতে এবং ৫৫ মিনিটে এরলিং হাল্যান্ড গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান ২-২ তে। এরপর নির্ধারিত সময়ের খেলায় কোনো দলই জয়সূচক গোল করতে পারেনি, ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়: সৌদি শক
অতিরিক্ত সময়েও প্রথমে গোল করে ম্যানচেস্টার সিটি। ফিল ফোডেনের দারুণ এক ফিনিশে তারা ৩-২ তে এগিয়ে যায় ১০৪ মিনিটে। কিন্তু শেষ হাসি হাসে আল-হিলাল। কালিদু কুলিবালি ৯৪ মিনিটে এবং মারকো লিওনার্দো ১১২ মিনিটে গোল করে নিশ্চিত করেন তাদের ঐতিহাসিক জয়।
গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়
- মারকো লিওনার্দো: ২টি গুরুত্বপূর্ণ গোল করে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হন।
- কালিদু কুলিবালি: ডিফেন্ডার হয়েও হেড করে গোল দেন এবং রক্ষণে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান।
- হাল্যান্ড ও ফোডেন: সিটির পক্ষে গোল করলেও রক্ষণভাগের দুর্বলতা তাদের জয় থেকে বঞ্চিত করে।
গার্দিওলার প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে পেপ গার্দিওলা বলেন, “আমরা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ছোট ছোট ভুলেই ম্যাচটা হাতছাড়া হয়েছে। আল-হিলাল তাদের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।” কোচ আরও বলেন, “আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়।”
আল-হিলালের জয় মানে কী?
এই জয় শুধুমাত্র আল-হিলালের জন্য নয়, বরং গোটা এশিয়ার ফুটবলের জন্য এক বড় বার্তা। প্রথমবারের মতো কোনো সৌদি ক্লাব ক্লাব বিশ্বকাপে ইউরোপিয়ান জায়ান্টকে হারাল। দলের কোচ সিমোন ইনজাগি বলেন, “এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং লক্ষ্যকে আরও শক্তিশালী করবে।”
চোট ও দলে পরিবর্তন
আল-হিলালের অধিনায়ক সালেম আল-দাওসারি হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে দলে ছিলেন না। তা সত্ত্বেও দলের সমন্বয় এবং আক্রমণাত্মক মানসিকতা প্রশংসার যোগ্য ছিল।
পরবর্তী ধাপ
এই জয়ের ফলে আল-হিলাল ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে এবং তারা এখন ফ্লুমিনেন্সের মুখোমুখি হবে। অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার সিটির জন্য এটা ছিল অপ্রত্যাশিত বিদায়, যা তাদের আত্মবিশ্লেষণে বাধ্য করবে।
উপসংহার
এই ম্যাচটি ফুটবল বিশ্বের জন্য ছিল এক বড় চমক এবং প্রমাণ করে দিল, আধুনিক ফুটবলে কারো জয় নিশ্চিত নয়। পজিশন, পাসিং কিংবা নাম – সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দলগত মনোভাব, ফিটনেস ও গোলের সুযোগ কাজে লাগানোই জয় এনে দেয়।
আল-হিলালের এই জয় ভবিষ্যতে এশিয়ান ক্লাব ফুটবলের মর্যাদা অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলবে, আর ম্যান সিটির জন্য এটি হবে নতুন শুরুর বার্তা।