অবিরাম বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে আসা পানির কারণে চট্টগ্রামের অসংখ্য মাছ চাষের পুকুর ভেসে গেছে, যার ফলে এর মৎস্য খাত প্রায় 290 কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ।
এটি মৎস্য চাষি এবং খাতের সাথে জড়িতদের মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
অবিরাম বর্ষণে মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মাছ চাষের পুকুর ও হ্যাচারি ভেসে গেছে। চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির ১৬ হাজার ৮৬৪টি মাছ চাষের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এছাড়াও, ১.৪ মিলিয়ন মাছের পোনা এবং ২০০,০০০ চিংড়ির পোনাও ২৪.৭ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।”
“বন্যায় মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রকল্প (সেচ প্রকল্প) ভেসে গেছে; চট্টগ্রামের অর্ধেকেরও বেশি মাছের চাহিদা এই প্রকল্পের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। বন্যার পানি এই প্রকল্পের অধীনে ৬,০০০ একর জলাশয় থেকে মাছ ভেসে গেছে। তাছাড়া, বড় কার্প হালদা নদীর মাছ বিভিন্ন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রকল্পটি দেশের বৃহত্তম মৎস্য প্রকল্প হিসেবে পরিচিত।
ইছাখালী ইউনিয়নের কৃষক কামরুজ্জামান দুলাল বলেন, “এখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত। বন্যায় সব মাছ ভেসে গেছে। আমার ১১ কোটি টাকা বিনিয়োগে ১০৭ একর জমিতে মাছ চাষের প্রকল্প ছিল। আমি লোকসান করেছি। বন্যার জন্য আমার যা কিছু ছিল সেখানেও ২০০ থেকে ৩০০ একর জমিতে মাছ চাষের প্রকল্প রয়েছে।”
এলাকার কৃষকরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করেছেন উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন আনুমানিক ক্ষতি প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। “আমি 8 বছর ধরে মাছ চাষে জড়িত, কিন্তু এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হইনি।”
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুধু মিরসরাইতেই মৎস্য খাতে প্রায় ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মিরসরাইয়ের পর সবচেয়ে বেশি লোকসানের মুখে পড়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা। এ উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের পুকুর ও মৎস্য প্রকল্প বন্যার পানিতে ভেসে গেছে এবং প্রায় ৩০.১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
একই অবস্থা হাটহাজারী উপজেলায়, যেখানে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ১২ কোটি টাকার মাছ।
বন্যার কারণে অন্যান্য উপজেলার মৎস্য খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “ফটিকছড়ির নাজিরহাট এলাকায় হালদা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে খাল-বিল থেকে পানি উপচে প্লাবিত হচ্ছে।”