নেত্রকোনায় বন্যায় ২২ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে

Date:

ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পানির কারণে নেত্রকোনার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, শতাধিক গ্রাম তলিয়ে গেছে, হাজার হাজার বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ২২,৬৪১ হেক্টর আমন ধান ক্ষেত এবং ১৭৭ হেক্টর সবজি ক্ষেত ধ্বংস হয়েছে।

বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে, দুই শতাধিক মাছের খামার ও পুকুরও ভেসে গেছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

বন্যার পানি তাদের বাড়িতে প্রবেশ করায় অনেক বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তারা তাদের গবাদি পশু নিয়ে এসে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি এবং সেতুর মতো উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।

বর্তমানে, জেলার প্রধান নদীগুলির জলস্তর ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এক লাখেরও বেশি মানুষ শুষ্ক খাদ্য, গবাদি পশুর খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকটের সম্মুখীন হয়ে আটকা পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর—দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অন্তত ১৫টি ইউনিয়ন মারাত্মক ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

দুর্গাপুরের কাকাইরগোড়া ইউনিয়নের শুকনাকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, “আমার বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে। থাকার জায়গা নেই। আমি গত তিন দিন ধরে আমার গবাদি পশু নিয়ে গ্রামের সেতুতে বসবাস করছি। আমরা শুয়েও থাকতে পারি না, এবং বাজার থেকে খাবার আনতে আমাদের নৌকা দরকার। এটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন।”

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম তার দুর্দশার কথা বলেন: “আমার চার একর আমন ধান পানির নিচে। পানি কমে গেলেও ফসল বাঁচানো অসম্ভব। সব শেষ হয়ে গেছে।”

জারিয়া জানজাইল বাজারের আমিনুল হকেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, আমার এক একর মৎস্য চাষে আমি ২ লাখ টাকার মাছ ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু বন্যার পানিতে সব ভেসে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, রোপা আমন ধানের মোট ২২ হাজার ৬৪১ হেক্টর ও সবজি ক্ষেত ১৭৭ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে। পরের দিন বা দুই দিনের মধ্যে পানি কমে গেলে সব ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে না, তবে মোট ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, বন্যায় ২০৩টি মাছের খামার, পুকুর ও ঘের ভেসে গেছে।

এদিকে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন জানান, বন্যার কারণে ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে, তবে পানি কমে গেলে দ্রুত ক্লাস শুরু হবে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেছেন যে সরকার বন্যা দুর্গতদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, “আক্রান্তদের স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেব।”

Daily Opinion Stars
Daily Opinion Starshttps://dailyopinionstars.com
Welcome to Daily Opinion Stars, your go-to destination for insightful opinions, in-depth analysis, and thought-provoking commentary on the latest trends, news, and issues that matter. We are dedicated to delivering high-quality content that informs, inspires, and engages our diverse readership.

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

India–U.S. Trade Deal to Cut Tariffs to 15–16%: A New Chapter in Economic Cooperation

India and the U.S. are nearing a major trade breakthrough that will reduce tariffs on Indian exports to around 15–16%. The deal is expected to boost Indian industries, open new markets for U.S. products, and strengthen the strategic economic partnership between the two democracies.

ন্যায়বিচারের নতুন অধ্যায়: মানবতাবিরোধী অপরাধে সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরার নির্দেশের তাৎপর্য

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক নির্দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরার আদেশ বাংলাদেশের ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে।

Trump’s “Destroy Career” Remark on Modi Backfires as India Hits Back with Calm Precision

Donald Trump’s “destroy career” jibe at Prime Minister Narendra Modi over Russian oil imports drew a strong yet measured response from India. The episode revealed New Delhi’s diplomatic composure and underscored its commitment to energy independence and strategic autonomy.

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের দাবি: বাংলাদেশ কি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের দাবি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই মামলার প্রভাব শুধু একজন নেত্রীর ওপর নয়, দেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ভবিষ্যতের ওপরও গভীরভাবে পড়তে পারে।