বরিশালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত পাঁচজনের মধ্যে দুইজন উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার্থী ছিলেন। তারা সবাই ঝালকাঠির বাসিন্দা বলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেছেন।
নিহতদের মধ্যে দুজনকে ঝালকাঠি সদরে, দুজনকে নলছিটিতে ও একজনকে রাজাপুর উপজেলায় দাফন করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে কামাল হোসেন সবুজ (৪০) ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় গাড়ি চালক ছিলেন। গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় সবুজকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তেইশ বছর বয়সী হৃদয় হাওলাদার তৈরি পোশাকের (আরএমজি) কর্মী ছিলেন। তিনি শেখেরহাটের বাসিন্দা। ১৯ জুলাই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সেলিম তালুকদার (২৮) একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তিনি ১৮ জুলাই বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ৩১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।
দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে মনির হেসেন (১৮) রাজাপুর উপজেলার বলাইবাড়ি এলাকায়। রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকায় তাকে হত্যা করা হয়।
আরেক ছাত্র নাইম হাওলাদার (১৭) নলছিটির বাসিন্দা। গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আরএমজি কর্মকর্তা সেলিমের স্বজনরা জানান, গত ১৮ জুলাই সকালে নারায়ণগঞ্জে তার কারখানায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন তিনি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গেলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার মাথায়, বুকে ও পিঠে গুলি লাগে।
তাকে প্রথমে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কেউ তার মাকে ঘটনাটি জানায়। খবর পেয়ে স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে আসেন।
রোগীর গুরুতর অবস্থা দেখে স্বজনরা বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) খালি পাননি।
একই সঙ্গে প্রশাসনিক হয়রানির ভয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায় বলে স্বজনদের অভিযোগ।
পরদিন সেলিমকে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করেন স্বজনরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১শে জুলাই রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং ১লা আগস্ট সকালে চিকিৎসক তার ডেথ সার্টিফিকেট জারি করেন।
স্বজনরা জানান, প্রায় এক বছর আগে সেলিমের বিয়ে হয়। তিনি আড়াই বছর আগে বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
পরে সহকারী মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে কিনা জানতে চাইলে সেলিমের ছোট বোন সোমা বলেন, “আমরা ঝামেলা এড়াতে এই মুহূর্তে কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে চাই না। এটা আমাদের ভাইকে ফিরিয়ে আনবে না।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ আলী বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিম ও নাইম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
এদিকে কামাল হোসেন ওরফে সবুজ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের গাড়ি চালাতেন।
তার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার শ্যালক রিপন হাওলাদার ঢাকায় এসে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, শনিবার সকালে কামাল হোসেন বাড্ডায় নাস্তা করতে বের হলে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
রিপন বলেন, “আমার ভাগ্নে ও ভাতিজিরা বাবাকে হারিয়েছে, আমার বোন বিধবা হয়েছে। আমি আর তাদের চোখের পানি সহ্য করতে পারছি না।”
কামাল হোসেন ওরফে সবুজের স্ত্রী সাদিয়া বেগম (রানু) বলেন, “এই তিন ছেলে মেয়ে এখন এতিম হয়ে গেছে। আমি তাদের সাথে কোথায় যাব? এখন কে তাদের দেখভাল করবে?”
কামাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বলকদিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মুনসুর হাওলাদার।
সোমবার সকালে কামালকে সদর উপজেলার আগরবাড়ী এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে দাফন করা হয়। সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, ঢাকার বিএফ শাহীন কলেজের মনির হোসেন নামে এক ছাত্রের গুলিবিদ্ধ লাশ বালাবাড়ি এলাকায় দাফন করা হয়েছে।