বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ মাসিক মৃত্যু। এই পরিসংখ্যান দেশের সড়ক নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুসারে, জানুয়ারি মাসে দেশে মোট ৫২১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪৮৬ জন নিহত এবং ১,০৫৪ জন আহত হয়েছেন। বিশেষ করে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। জানুয়ারি মাসে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭০ জন নিহত এবং ১৭৩ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩১.৪৭%, মোট মৃত্যুর ৩৪.৯০% এবং মোট আহতের ১৬.৪১%।
ভৌগোলিকভাবে, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ সংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বিভাগে ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৭ জন নিহত এবং ২৭০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৩৩টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ১২৫ জন আহত হয়েছেন।
এই পরিসংখ্যানগুলি সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে: বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাব, এবং দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, চালকদের প্রশিক্ষণ, যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
সড়ক দুর্ঘটনার এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেশের অর্থনীতি ও সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন, যা বছরে প্রায় ২৫,০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৫.৩% ক্ষতি হয়।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এবং সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন অপরিহার্য। এছাড়া, চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো সম্ভব।
সড়ক দুর্ঘটনার এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। সচেতনতা ও সতর্কতার মাধ্যমে আমরা সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করতে পারি এবং একটি নিরাপদ সড়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি।