তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের বিদ্রোহে সব পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর জন্য শেখ হাসিনা দায়ী।
“আমরা শেখ হাসিনাকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তা করেননি, যার ফলে দেশে রক্তস্নাত হয়েছে। ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনরত ছাত্র ও জনতার ওপর গুলি চালানোর জন্য স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করা হয়েছে”। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের (জেপিসি) ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
নাহিদ বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা তার সব নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের মাঠে থাকতে বললেও কাউকে না জানিয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তের কারণে ওই দিন অনেক পুলিশ সদস্য মারা যান।
“বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগ্রামের কথা আমরা জানি, বিপরীতে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিভিন্ন দালালের কথাও আমরা জানি। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন যতটা স্বাধীনতা ভোগ করছে, ততটা স্বাধীনতা কখনোই ভোগ করেনি।
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের চেতনা ও আকাঙ্খা মিডিয়া থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে।
“এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক কারণ আমাদের অনেক ভাই-বোন এখনও হাসপাতালে আঘাতে ভুগছেন। অনেকে এখনও শাহাদাত বরণ করছেন (তাদের আঘাতে আত্মহত্যা করছেন), কিন্তু আমাদের মিডিয়ায় যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের খবর দিন দিন কমে আসছে। সেগুলি জনগণের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে,” তিনি বলেছিলেন।
নাহিদ বলেন, বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম জুলাই বিদ্রোহে শহীদদের মৃত বলে উল্লেখ করছে যা খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সকল প্রজ্ঞাপনে তাদের শহীদ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও দেশবাসী তাদের শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, মিডিয়া তাদের শহীদ বলতে এগোচ্ছে।
দেশবাসীর সামনে গণমাধ্যম তাদের মৃত ও নিহত হিসেবে উপস্থাপন করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, রক্ত ঝরায় এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল এবং রক্ত ঝরায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র এই ইতিহাসকে মুছে ফেলতে পারবে না।
নাহিদ বলেন, “অভ্যুত্থানের সময় আমরা অনেক সাংবাদিককে শাহাদাত বরণ করতে দেখেছি এবং আহত হতে দেখেছি। প্রেসক্লাবের অনেক সদস্য আমাদের গণঅভ্যুত্থানে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা,” বলেন নাহিদ।
“গণআন্দোলনের সময় আমরা শুনেছিলাম যে আমাদের আন্দোলনের সংবাদ প্রচার বা প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি এবং সংবাদ কভার করার কারণে সাংবাদিকদের মিডিয়া হাউসে নির্যাতন করা হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছিলাম যে সাংবাদিকরা এখনও বিভিন্ন চাপের মধ্যে রয়েছে। এজেন্টরা ফ্যাসিবাদ ওইসব ঘরে রয়ে গেছে তাদের অবশ্যই সরিয়ে দিতে হবে।
ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করা ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, “আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলছি যার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের দলগুলোকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে নির্মূল করতে হবে। আমরা মিডিয়াকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে চাই। “
উপদেষ্টা বলেন, “আমি ‘টাইম’ ম্যাগাজিনকে বলেছিলাম যে শেখ হাসিনা একজন সাইকোপ্যাথ এবং রক্তচোষাকারী, তাই এটা প্রমাণিত হয়েছে।”
নাহিদ বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু করলেও সরকারি বাহিনী ও তাদের দলের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। তিনি আরও বলেন, “আমরা বারবার সরকারকে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা বন্দুক নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই উপদেষ্টা পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের যারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণকে উসকানি দিচ্ছেন তাদের সতর্ক করে বলেন: “শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন রাজনীতি না করে, শুধু ফাঁসির মঞ্চে হাঁটতে।”
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষে ওকালতি করার মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করে নাহিদ বলেন: “অন্তবর্তীকালীন সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করুন কিন্তু ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন না।”
উপদেষ্টা যথাযথ শ্রদ্ধার সাথে গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে প্রাণ হারানো সাংবাদিকদের স্মরণ করেন এবং তাদের বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করেন।
নাহিদ জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে সমুন্নত রেখে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় সংকল্প ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন উপদেষ্টা।
এ সময় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের (জেপিসি) সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, সাবেক ও বর্তমান নেতা ও জেপিসির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।