সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই মশাবাহিত রোগের স্থায়ী জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (DGHS) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩২টি নতুন ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা এবং আরও একজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে, যার ফলে চলতি বছরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা নয় জনে পৌঁছেছে।
এই সংক্রমণের বৃদ্ধির ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারিতে ১৯টি নতুন ডেঙ্গু রোগীর খবর পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১১ জন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শনাক্ত হয়। সেই সময় পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৯১ জন।
রাজধানী ঢাকা ডেঙ্গু সংক্রমণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ৩২টি নতুন সংক্রমণের মধ্যে ১০টি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এলাকা থেকে এসেছে, যা নগর এলাকায় রোগের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি নির্দেশ করে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিশেষ করে শীতের মাসগুলিতে ডেঙ্গুর পুনরাবৃত্তি হওয়া অস্বাভাবিক এবং এটি বাংলাদেশে রোগের পরিবর্তিত প্রকৃতির বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। নগরায়ন, অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং মশার জন্য অনুকূল প্রজনন পরিবেশ ডেঙ্গুর দীর্ঘস্থায়ী বিস্তারের অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে কমিউনিটির সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জমে থাকা পানি অপসারণ, মশার প্রতিরোধক ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হচ্ছে। দ্রুত শনাক্তকরণ এবং সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।
সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান এবং মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তবে, সাম্প্রতিক সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখিয়ে দিচ্ছে যে ডেঙ্গুর ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও টেকসই প্রচেষ্টা ও নতুন কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন।
পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন ঘটার সঙ্গে সঙ্গে জনগণকে সর্বদা সতর্ক এবং স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সজাগ দৃষ্টিভঙ্গিই বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রভাব কমিয়ে আনার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।