ঢাকার রামপুরা এলাকায় হৃদয়বিদারক এক ঘটনায়, একটি ট্যাঙ্কার লরির চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন এক মোটরসাইকেল আরোহী।
ফারাজী হাসপাতালের সামনে ভোরে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম আবু নাসের পাটোয়ারী (৩৮), যিনি চট্টগ্রাম বুল হোটেল এবং রেস্তোরাঁর ম্যানেজার ছিলেন। তিনি কর্মস্থলে যাওয়ার পথে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চালক এবং তার সহকারীকে আটক করেছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনা ঢাকার সড়ক নিরাপত্তার ধারাবাহিক সংকটকে তুলে ধরেছে।
রাজধানীর ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যার অনেকগুলোই প্রাণঘাতী। উদাহরণস্বরূপ, আরেকটি ঘটনায়, ৩৫ বছর বয়সী মোটরসাইকেল আরোহী হেমায়েত হোসেন মালিবাগ এলাকায় বাসের ধাক্কায় নিহত হন। হেমায়েত, যিনি ছোটখাট সজ্জার ব্যবসায়ী ছিলেন, নওয়াবপুর থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাকেও দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাসটি জব্দ করেছে এবং চালককে আটক করেছে।
এই ঘটনাগুলো সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২৫,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়। এই চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার উচ্চ হারের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- উন্মত্ত চালনা: অনেক চালক বেপরোয়া আচরণ করেন, যার মধ্যে রয়েছে দ্রুতগামী চালনা, হঠাৎ লেন পরিবর্তন এবং ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা।
- খারাপ রাস্তার অবস্থা: ঢাকার অনেক রাস্তায় গর্ত, যথাযথ সাইনেজের অভাব এবং পর্যাপ্ত আলোর অভাব থাকে, যা বিপজ্জনক চালনার পরিবেশ তৈরি করে।
- নিয়ম প্রয়োগের অভাব: ট্রাফিক নিয়ম প্রায়ই কঠোরভাবে কার্যকর হয় না, যার ফলে নিয়ম লঙ্ঘনের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
- চালকের অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ: অনেক চালক যথাযথ প্রশিক্ষণ পাননি এবং বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালান, যা তাদের সড়ক চলাচলের জটিলতা মোকাবিলায় অক্ষম করে তোলে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহুমুখী পদক্ষেপ প্রয়োজন:
- ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে কার্যকর করা: কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে ট্রাফিক নিয়ম কঠোরভাবে মানা হচ্ছে এবং লঙ্ঘনের জন্য কঠিন শাস্তি আরোপ করা হচ্ছে।
- পরিকাঠামো উন্নয়ন: রাস্তা মেরামত, যথাযথ সাইনেজ এবং পর্যাপ্ত আলোতে বিনিয়োগ দুর্ঘটনার হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
- জনসচেতনতা প্রচার: জনগণকে সড়ক নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলা এবং বেপরোয়া চালনার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।
- চালকের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানো: যথাযথ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রয়োগ এবং শুধুমাত্র যোগ্য ব্যক্তিদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করতে পারে।
আবু নাসের পাটোয়ারী এবং হেমায়েত হোসেনের মতো মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের সড়কগুলির বিপদ সম্পর্কে করুণ স্মারক।
সরকারি সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী বাহিনী এবং সাধারণ জনগণসহ সকল অংশীদারদের একসঙ্গে কাজ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। কেবল সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা আমাদের সড়কগুলোকে নিরাপদ করতে পারব এবং অকাল মৃত্যু রোধ করতে সক্ষম হব।