২১ জুলাই ২০২৫ ঢাকার উত্তরা এলাকার Milestone School & College ক্যাম্পাসে ঘটে এক ভীতিকর Bangladesh Air Force F‑7 BGI প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা। একটি সাদামাটা প্রশিক্ষণ ফ্লাইট বিমান ওঠার মাত্র ১ মিনিটের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিকট শব্দে পতিত হয় স্কুল ভবনের ওপর।মানবিক ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ — ২০–২৭ জন নিহত, তাঁদের অধিকাংশই ছাত্রছাত্রী; আহত হয়েছেন অন্তত ১৭১ জন, যাদের অনেকেই বার্ন ও গুরুতর আহত।
দুর্ঘটনার পটভূমি ও কারণ
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে F-7 BGI যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে থাকে। এটি একটি চীনা প্রযুক্তিনির্ভর সুপারসনিক ফাইটার জেট, যেটি সাধারণত প্রশিক্ষণ ও নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হয়। দুর্ঘটনার দিন বিমানটি কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের কিছু সময় পরেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিধ্বস্ত হয়।
এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বিমানে যান্ত্রিক সমস্যা ছিল এবং পাইলট শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জনবহুল এলাকা এড়িয়ে অবতরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু সময় খুবই সীমিত ছিল এবং দুর্ঘটনাটি এড়ানো সম্ভব হয়নি।
ভয়াবহতা ও উদ্ধার কাজ
বিমানের পতনের ফলে বিদ্যালয়ের একটি অংশে আগুন লেগে যায়, সৃষ্টি হয় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি করে। ঘটনাস্থলে দ্রুত ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টিম এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। বহু আহত শিক্ষার্থী ও কর্মচারীকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও জাতীয় শোক
পুরো জাতি এই ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানান। দেশজুড়ে পালিত হয় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক, সব সরকারি ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ভবিষ্যতের করণীয়
এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে সামরিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষ করে জনবহুল এলাকার কাছাকাছি বিমান প্রশিক্ষণ চালানো কতটা নিরাপদ তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। চীনের তৈরি F-7 BGI যুদ্ধবিমান ইতিপূর্বেও বিভিন্ন দেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তাই বাংলাদেশকেও এই ধরনের বিমান ব্যবহার নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
সরকার ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং আগামীতে প্রশিক্ষণের সময় বিমান চলাচলের নিরাপত্তা বিধান ও বিমান প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য সুপারিশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
উপসংহার
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি অন্যতম দুঃখজনক বিমান দুর্ঘটনা। এটি শুধু জীবনহানির কারণ হয়নি, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির দিকেও প্রশ্ন তুলেছে। আমাদের আশা, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিনে বিমান বাহিনীর নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। যেন আর কোনো পরিবার তাদের সন্তান বা প্রিয়জনকে এভাবে হারাতে না হয়।